বিশ্ব ইজতেমার সূচনা হয় ভারত থেকে কিন্তু অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে ইজতেমা হচ্ছে বাংলাদেশে। ১৯২৬ সালের হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ) ভারতের উত্তরপ্রদেশের মেওয়াত নামক এলাকায় তাবলীগে জামাতের ইজতেমার সূচনা করেন।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় জমায়েত হল হজ আর হজের পর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত হল বিশ্ব ইজতেমা। বাংলাদেশের প্রতিবছর ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ইজতেমা হয়ে আসছে ৫০ বছর বেশি সময় ধরে।এ বিশ্ব ইজতেমায় লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নেন এর মধ্যে বিদেশীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
তাবলীগ জামায়েত কি
তাবলীগ হলো আরবি শব্দ যার অর্থ হলো প্রচার করা। আর জামায়েত হলো আরবি শব্দ যার অর্থ হলো দল, সম্প্রদায় বা সংঘ। সুতরাং তাবলীগ জামাতের অর্থ হলো প্রচারের দল বা প্রচারের সম্প্রদায়। তাবলীগ জামাত হলো একটি ইসলামিক সংগঠন। তাবলীগ জামাতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর পথে মানুষকে ফিরিয়ে আনা।
এবং মুমিনদের ও নিজ দলে সদস্যদেরকে ধর্মচর্চায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করে থাকে। যেভাবে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেন আমার পক্ষ হতে একটিমাত্র বাণী হলেও তা অন্যের কাছে পোঁছে দাও। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জীবদ্দশায় চর্চা হতো এবং তা হল বিশেষত আনুষ্ঠানিকতা ব্যক্তিগত আচরণ ও পোশাক বিষয়গুলোতে।
বিশ্ব ইজতেমা কেন পালন করা হয়
বিশ্ব ইজতেমা হল লক্ষ লক্ষ মুসলমানের সমন্বয়ে তাবলীগ জামাত দ্বারা পরিচালিত একটি মহাসমাবেশ। এটা গোটা বিশ্বজুড়ে তাবলীগ জামায়েতের ইজতেমা পালিত হয়। বিশ্ব ইজতেমা মুসলমানদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বিভিন্ন দেশে উদযাপন করা হয়।ব্রিটিশ শাসনামলে ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল ভারতবর্ষের বিশাল সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী ।
নামে মুসলিম ধর্মাবলম্বী হলেও ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখেন না এমন মানুষের সংখ্যায় ছিল সবচেয়ে বেশি । সাধারণ মানুষের মাঝে ধর্মীয়বোধ জাগাতে সর্বপ্রথম তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) । ভারতের মেওয়াত নামক এলাকায় সর্বপ্রথম তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে । বর্তমানে ১৭০ থেকে ১৮০ টি দেশে তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম চলছে।
বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশে কেন হয়
বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের পথ চলা শুরু হয় মাওলানা আব্দুল আজিজ (রহঃ) হাতধরে । ১৯৪৬ সালে হযরত মাওলানা ইউসুফ (রহঃ) উপস্থিতিতে ঢাকার কাকরাইলে প্রথম বার্ষিকী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে তাবলীগের বড় ইজতেমা হয় চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে। এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা।
১৯৬০--১৯৬২ এবং ১৯৬৫ সালে তাবলীগ জামাতের বার্ষিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় কাকরাইল মসজিদের পাশে রমনা উদ্যানে। তখনও এটি কেবল ইজতেমা হিসেবেই পরিচিত ছিল । ১৯৭২ সালে ইজতেমার আয়োজন করা হয় ঢাকার টঙ্গির পাগার গ্রামের খোলা মাঠে। ওই বছর সত্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেয়।
ফলে সেটি বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিত লাভ করে। ওই বছরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ১৬০ একরের সুবিশাল মাঠ তাবলীগের বিশ্ব ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেন। তখন থেকে এখনও বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রতি বছর বাংলা দেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ টি দেশের মানুষ দিনের পিপাসা নিবারণে ছুটে আসেন তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমায়।ইতোমধ্যেই বিশ্বে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহৎ সমাবেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বিশ্ব ইজতেমা।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত
বিশ্ব ইজতেমার শেষ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আখেরি মোনাজাত। প্রবল ধর্ম চেতনায়র উদ্দীপনা নিয়ে মুসল্লিগণ আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন আর আমিন আমিন বলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন । আখেরি মোনাজাতের সময় টঙ্গীর-তুরাগ নদীর তীর যেন পরিণত হয় মুসল্লিদের জোয়াির। আর আখেরি মোনাতের মধ্য বিশ্ব ইজতেমা শেষ হয় শেষ হয়। ধর্মীয় উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি ও মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব ইজতেমার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্ট সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি বিশ্ব ইজতেমা কেন বাংলাদেশে হয় এবং বিশ্ব ইজতেমা ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এবং তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম সম্পর্কে। আশা করি আপনি মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন পোস্টটি পড়েছেন।
বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে সকল তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। আপনার ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং একটা কমেন্ট করবেন আরো এ সকল ধরনের পোস্ট পেতে আমাদের সাথে থাকুন
প্রতিভা ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url